Wellcome to National Portal
তথ্য অধিদফতর (পিআইডি) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

তথ্যবিবরণী ১৫ সেপ্টেম্বর

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ শিক্ষা দিবসে প্রকাশের জন্য
তার পূর্বে প্রকাশযোগ্য নয়

বিকাল পাঁচটার আগে প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে না
তথ্যবিবরণী                                                                                          নম্বর : ২৯২৩


ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবস
লক্ষ অর্জনে যুগান্তকারী সাফল্য, যেতে হবে বহুদূর
নুরুল ইসলাম নাহিদ

ঢাকা, ৩১শে ভাদ্র (১৫ই সেপ্টেম্বর) :
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’। ১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বর এই ‘শিক্ষা দিবস’। শিক্ষার জন্য সংগ্রাম, ত্যাগ, বিজয়, গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই শিক্ষা দিবসের এবার ৫৪তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৫৪ বছর পূর্বে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিভূ সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেওয়া গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ বাতিল করে সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণমুখী বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সহজলভ্য আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে আইয়ুবের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আগস্ট মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। ছাত্রসমাজের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রসমাজের আন্দোলনের প্রতি সাধারণ জনগণের সমর্থন ও সহানুভূতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানেও প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ ও জনগণের মধ্যে বিক্ষোভ এবং আন্দোলন প্রসারিত হতে থাকে।
আমার সৌভাগ্য যে, আমি এই আন্দোলনের প্রথম মিছিলেই অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং সেই ধারাবাহিকতা আমার জীবনে এখনও অব্যাহত আছে। আগে থেকে ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র নেতাদের সাথে গোপনে যোগাযোগ ও কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকলেও রাজপথের প্রত্যক্ষ সংগ্রামের যে প্রভাব আমার ওপর পড়েছিল, তাই আমার পরবর্তী সমগ্র জীবনে বিধিলিপির মত আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
১৯৫৯ সালে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক আইয়ুব খান তৎকালীন শিক্ষাসচিব এস এম শরিফকে চেয়ারম্যান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। এই কমিশন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই কমিশন রিপোর্ট প্রকাশ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে আইয়ুব সরকার এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এই তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ তে যে সকল বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- শিক্ষাকে ব্যয়বহুল পণ্যের মতো করা এবং শুধু উচ্চবিত্তের সন্তানদের স্বার্থে উচ্চশিক্ষাকে সীমিত করা। সাধারণের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ একেবারেই সংকুচিত করে ফেলা। শিক্ষাব্যয়কে পুঁজি বিনিয়োগ হিসেবে দেখে শিক্ষার্থীদের তা বহন করা, ‘যে অভিভাবক বেশি বিনিয়োগ করবেন তিনি বেশি লাভবান হবেন’ এ জাতীয় ধারণা, অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে ‘অবাস্তব কল্পনা’ বলে উল্লেখ করা, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ইংরেজি পাঠ বাধ্যতামূলক করা, উর্দূকে জনগণের ভাষায় পরিণত করা; সাম্প্রদায়িকতাকে কৌশলে জিইয়ে রাখার চেষ্টা; ডিগ্রি কোর্সকে দুই বছরের স্থলে তিন বছর মেয়াদি করা ইত্যাদি। তাৎক্ষণিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স।
এই সকল বিষয় ছাত্রসমাজ এবং সচেতন মহলকে দারুণভাবে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। এরই পরিণতিতে সার্বজনীন গণমূখী শিক্ষার দাবিতে ছাত্রসমাজের আন্দোলন ব্যাপক রূপ লাভ করে এবং ১৭ সেপ্টেম্বর অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন আইয়ুব সরকারকে বাধ্য করে ঐ শিক্ষানীতি স্থগিত করতে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির পর সকল রাজনৈতিক দল ও কর্মকান্ড, ছাত্রসংগঠনসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের তৎপরতা বেআইনি করে সকল ধরনের মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায়-বিচারের সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়। চলে চরম দমননীতি। এরই মধ্যে ষাট সালের দিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা গোপন সমঝোতা ও যোগাযোগ রেখে নিজ নিজ সংগঠন গোছানোর এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু করেন। এভাবে ছাত্র সংগঠন দুটি ধীরে ধীরে সংগঠিত হতেথাকে এবং সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গেও যোগাযোগ গড়ে তোলে। আমি ষাট সালে দশম শ্রেণির ছাত্র এবং স্কুল ক্যাপ্টেন ছিলাম। ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা আমার সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলেন, আমিও গোপনে সক্রিয় হয়ে উঠি।
তৎকালীন দুই বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন এবং ডাকসু , বিভিন্ন হল ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাধারণ ছাত্রসমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ছাত্র-আন্দোলনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়, যার ফলে সকল আন্দোলন ও কর্মসূচির প্রতি সাধারণ ছাত্রসমাজের সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।

একদিকে সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অন্যদিকে চাপিয়ে দেওয়া গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল এবং গণমূখী শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভে দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এই পটভূমিতে বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা দেশে হরতাল ঘোষণা করে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার দাবিতে ঐ হরতাল সারা দেশে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে এবং ছাত্র-জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আইয়ুব সামরিক শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়।
১৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ছাত্র-আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে এবং একটি গণমুখী সর্বজনীন আধুনিক শিক্ষানীতির দাবিতে ঐতিহাসিক ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র আন্দোলন ও শহীদদের আত্মদান তথা শিক্ষার ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বরকে সেদিন ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
পাকিস্তানের শাসকশ্রেণি তাদের কায়েমি স্বার্থ এবং শাসন-শোষণ স্থায়ী করার লক্ষ্যে শিক্ষাকে ব্যবহার করার জন্য ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা চেয়েছিল শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে তাদের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আচ্ছন্ন করে রাখতে। তাই ছাত্রআন্দোলন ও ছাত্র-জনতার ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করলেও আইয়ুব খানের সরকার বা শাসক শ্রেণি তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।

সরকার ১৯৬৪ সালে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিশন গঠন করে নতুন মোড়কে তাদের পরিকল্পিত শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থা কায়েমের পথ গ্রহণ করে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই কমিশনের নাম দেওয়া হয়-‘ঈড়সসরংংরড়হ ড়হ ঝঃঁফবহঃং চৎড়নষবস ধহফ ডবষভধৎব’ বা ‘ছাত্র সমস্যা ও কল্যাণ কমিশন’। এই কমিশন দ্রুতই বছরের মাঝামাঝি তাদের রিপোর্ট প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করে। ‘হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে পরিচিত এই রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য বহু চেষ্টা ও কৌশল গ্রহণ করেও  প্রবল ছাত্র-আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার তা বাস্তবায়নে সক্ষম হতে পারেনি।
এরপরও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী হাল ছাড়েনি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব খানের ক্ষমতা ত্যাগ নিশ্চিত হলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতায় বসেই সীমিত সময়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে সর্বাগ্রে আবারও শিক্ষানীতি প্রণয়নে হাত দেয়। প্রায় চার মাসের মধ্যে এয়ার মার্শাল নূর খানের নেতৃত্বে একটি কমিশন করে দ্রুত একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেই পুরোনো লক্ষ ও উদ্দেশ্য-পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নতুন প্রজন্মের ওপর তাদের চিন্তা-চেতনা চাপিয়ে দেওয়া। দেশের সমগ্র ছাত্রসমাজ এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে তা প্রত্যাখ্যান করে। কেবল পাকিস্তানি ভাবধারা ও শাসক শ্রেণির অনুসারী জামায়াতে ইসলামি ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘ (বর্তমানে ইসলামি ছাত্রশিবির) ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করে। এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আলোচনা সভায় ইসলামী ছাত্র সংঘ সশস্ত্র হামলা করে বহু ছাত্রকে আহত এবং একজনকে হত্যা করে।
আমাদের গৌরবময় সকল সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরই প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড.কুদরাত-ই-খুদার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি আধুনিক গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেও ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর প্রায় অর্ধডজন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে স্বাধীন দেশে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের বিপুল সমর্থনে সরকার গঠনের পর দেশের সকল রাজনৈতিক মতবাদ এবং সমাজের নানা চিন্তার সকল অংশের মানুষের মতামত গ্রহণ করে সকল চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে তা অনুমোদন করা হয়। এজন্য সরকারকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। আমাদের দেশে এই প্রথম সরকারি এবং বিরোধীদলসহ জাতীয় ঐক্যমতে একটি জাতীয় মৌলিক নীতি, যা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এই শিক্ষানীতিতে ছাত্রসমাজ ও জাতির ৫৪ বছরের নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের প্রতিফলন ঘটেছে। বাঙালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের লক্ষ্য, একটি দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল স্বাধীন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান নতুন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করে গড়ে তোলার লক্ষ্য ও সুনির্দিষ্ট করণীয় ইতোমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এক সুদূর প্রসারী লক্ষ্য সামনে রেখে অনেক করণীয় সম্পন্ন করা হয়েছে, অনেক কাজ চলমান, অনেক কাজের ভিত্তি গড়ে তোলা হচ্ছে। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার একটি মৌলিক দলিল।
আমরা শিক্ষার মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি আমাদের জাতীয় লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আমাদের নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করে তোলা। জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের পথে বাংলাদেশ অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে, যা- ইতোমধ্যে দৃশ্যমান এবং স্বীকৃত। চরম দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অভাব, দুর্ভিক্ষ বর্তমানে অতীত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনীতি এবং সামাজিক জীবনে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন নিশ্চিত।
এই লক্ষ্য পরিপূর্ণভাবে অর্জনের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানুষের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গীর উন্নত পরিবর্তন ও প্রস্তুতি। মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এক বিরাট রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা সমাজের সকল ক্ষেত্রে মৌলিক ইতিবাচক পরিবর্তন।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন একটি ‘আধুনিক অগ্রবাহিনী শক্তি’ গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার তাই মূল লক্ষ্য হচ্ছে- আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক উন্নত বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলা। কিভাবে গড়ে তুলবো? সকলেই একমত হবেন যে তাদের শিক্ষিত করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। আমরা এই শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল মৌলিক পরিবর্তন চাই। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ এ শিক্ষার সার্বিক লক্ষ্য ও সুনির্দিষ্ট করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে বিস্তারিত আলোচনা বা ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। সকলের কাছে প্রত্যাশা- জাতীয় শিক্ষানীতিটা সুযোগ পেলে পড়ে দেখবেন।
আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা চাইÑবর্তমান যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিশ্বমানের শিক্ষা-জ্ঞান, প্রযুক্তি ও দক্ষতা। বর্তমান যুগে সারা বিশ্ব একাকার। তাই আমাদের নতুন প্রজন্মকে নিজের দেশ গড়ে তুলতে হবে আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যে, তেমনি তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য নাগরিক হিসেবেও গড়ে তুলতে হবে। আর একথাও মনে রাখতে হবে- আমাদের নতুন প্রজন্মকে জগতের সকল দেশের নতুন প্রজন্মের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজের স্থান করে নিতে হবে, দেশ গড়ে তুলতে হবে, দেশের স্থানও করে নিতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে- আমাদের নতুন প্রজন্মকে শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি দিয়ে মাথা ভর্তি করে দিলেই হবে না। তাদের অবশ্যই ভাল মানুষ হতে হবে। সততা, নিষ্ঠা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ও শ্রদ্ধাশীল এবং নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত এক পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।    
আমাদের অনেক ভুলভ্রান্তি আছে, সীমাবদ্ধতা আছে, ব্যর্থতাও আছে। তা সত্ত্বেও আমাদের সীমিত সম্পদ, সীমিত দক্ষ জনবল, সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়েও আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, জনগণ ও সকল মহলের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে গত প্রায় সাড়ে সাত বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছি।
সাধারণ বিচারে একথা বলা ভুল হবেনা- সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের সংখ্যাগত বিবেচনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। তবে গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে-কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা এখনো ছুঁতে পারেনি। আমাদের আসল সমস্যা হচ্ছে- গুণগত মানের শিক্ষক।
শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ- শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা। সেটি উপলদ্ধি করেই নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে এগুচ্ছি। স্থানাভাবে এখানে বিস্তারিত আলোচনা বা সকল বিষয়ে তুলেধরা সম্ভব নয়। অতি সংক্ষেপে কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি:
১.    প্রায় সকল শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসা এবং মাধ্যমিক পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীর সমতা অর্জন, নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে ১৮৯ কোটি ২১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮৯৫টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক, যুগোপযোগী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, ১০ লক্ষ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার শিক্ষা সকল স্তরে বাধ্যতামূলক ভাবে চালু, প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু, সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তন, ২০ হাজার কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, উপজেলায় আইসিটি রিসোর্স সেন্টার স্থাপন, মেধাবৃত্তি ছাড়াও বছরে ১ কোটি ২৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান, ৬০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে প্রতিবন্ধী বৃত্তি প্রদান, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যেÑ শিক্ষকের গুণগত মান বৃদ্ধি ও পাঠদান পদ্ধতি উন্নত করার জন্য নিয়মিত উন্নত মানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ চলছে। পিএসসি’র অনুরূপ জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ)  মাধ্যমে সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হয়েছে ।
আরো সহজ আকর্ষণীয় চমৎকার পাঠ্যপুস্তক তৈরি, বইয়ের চাপ কমানো, পরীক্ষা পদ্ধতির বড় রকমের সংস্কার, প্রবীন অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি করে বিভিন্ন সাব-কমিটির মাধ্যমে এরকম সকল কাজের পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনা করে ভুল-ত্রুটি শুধরানো এবং উন্নত মানের কাজ, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, গবেষণা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি প্রভৃতি বহুমূখী কার্যক্রম প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২.     মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-কে আরো কার্যকর, উন্নত সেবা প্রদান এবং ব্যাপক কার্যক্রমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার উপর জোর দিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। মাউশির ‘শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব ভাবমূর্তি (ওসধমব) গড়ে তোলার লক্ষ নির্ধারণ করে আরো দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নত মানের বেশি কাজ করতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
৩.     শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ডসমূহ, এনটিআরসিএ, প্রভৃতি সকল প্রতিষ্ঠান, দপ্তর ও কার্যালয়কে গতিশীল, দুর্নীতিমুক্ত করার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
৪.     আধুনিক যুগের সাথে সঙ্গতির্পূণ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে মোট শিক্ষার্থীর ১% কারিগরি শিক্ষা পেত এবং তা যুগোপযোগী ছিলনা, আজ তা যুগোপযোগী করে ১৪% এ উন্নীত করা হয়েছে। ২০২০ সালে তা ২০% এবং ২০৩০ সালে ৩০% অতিক্রম করবে। ভবিষ্যতে তা ৬৫% এর ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে হবে। বিদেশ থেকে প্রায় ২ হাজার শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হচ্ছে। শিক্ষকদেরপ্রশিক্ষণের এই সুযোগ আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে।
৫.     মাদ্রাসা শিক্ষায় ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন এবং আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধন করে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে- যা ইতোপূর্বে অভাবনীয় ছিল। শত বছরেও মাদ্রসা শিক্ষায় এত ব্যাপক উন্নয়ন হয়নি।
৬.     উচ্চ শিক্ষাকে গতানুগতিকতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা, নতুন জ্ঞান অনুসন্ধান ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে হবে। গবেষণায় যথাসাধ্য গুরুত্ব দিয়ে প্রতি বছরই বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। গবেষণা ও মানবৃদ্ধির উপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে। নতুন ‘এক্রিডিটেশন কাউন্সিল’আইন করা হচ্ছে।
৭.     চরম বিশৃঙ্খলার অবসান করে নকলমুক্ত, প্রশ্নের নিরাপত্তা নিশ্চত করে এসএসসি ও এইচএসসি ও সমমানের সকল পরীক্ষা নির্ধারিত একই তারিখে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় এবং পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল দেয়া হয়। স্কুলের ক্লাস ১ জানুয়ারি, কলেজের ক্লাস ১ জুলাই শুরু হয়। এসবের একদিনও ব্যত্যয় হয়নি।
৮.    সকল স্তরে নিয়মরীতি অনুসরণ করে ভর্তি ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল করা হয়েছে; যদিও মান সম্মত প্রতিষ্ঠানে সকলের ভর্তির সুযোগ হবে না। সকল দেশেই তা প্রতিযোগিতায় স্থির হয়।
৯.     সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। এ বছর তার চেয়েও প্রায় ৩ গুণ বেশি উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
১০.     শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা, গুণগত মানবৃদ্ধি, গবেষণা, শিক্ষানীতির লক্ষ বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ সহায়তায় ১২টি প্রকল্প গ্রহণ করে ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
১১.     পশ্চাদপদ অঞ্চলসমূহের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। শুধু একটি প্রকল্পের একটি কর্মসূচির উদাহরণ দিচ্ছি। পশ্চাদপদ অঞ্চলের যে সকল স্কুলগুলোতেএকজনও শিক্ষার্থী ইংরেজি ও গণিতে পাস করতো না, সেখানে আমরা বেশি বেতন দিয়ে অতিরিক্ত মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ইংরেজি-গণিতে সাড়ে ১১ লক্ষ অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েছি। এখন প্রায় সবাই পাস করে। এখন বিজ্ঞান বিষয়ে এরকম ক্লাস নিচ্ছি।
১২.     প্রতিবছর মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক-সাহিত্য প্রভৃতি প্রতিযোগিতা করে শিক্ষা সপ্তাহ পালন, গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রভৃতি বহু কার্যক্রম চলছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা শিক্ষা দিবসের তাৎপর্য উপলব্ধি করে, শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কার্যক্রম প্রতিদিন প্রসারিত করছি। আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। শিক্ষার আন্দোলনে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শিক্ষা দিবস অমর হোক। লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যেতে হবে বহু দূর।        

#
ঢালী/সাহেলা/আলী/সুবর্ণা/শামীম/২০১৬/  ঘণ্টা    
বিকাল পাঁচটার আগে প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে না
 

 

Handout 12 Septembar 2016_for mail.doc Handout 12 Septembar 2016_for mail.doc

COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon