তথ্যবিবরণী নম্বর : ৮৩৪
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি চূড়ানত্ম
ঢাকা, ১০ চৈত্র (২৪ মার্চ) :
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৭ পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
২৬ মার্চ প্রত্যূষে রাজধানীতে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পসত্মবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পসত্মবক অর্পণ করবেন। তারপর বাংলাদেশে অবসি'ত বিদেশি কূটনীতিকরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পসত্মবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশুকিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপসি'ত থাকবেন।
এদিন হবে সরকারি ছুটির দিন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং সরকারি-বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। গুরম্নত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা এবং বিভিন্ন রঙিন পতাকায় সজ্জিত করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, ইসলামী ফাউন্ডেশন, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, ক্রীড়ানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। জাতির শানিত্ম ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। এছাড়া রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সপ্তাহব্যাপী সমরাস্ত্র প্রদর্শনী চলবে। রাজধানীর বিভিন্ন স'ানে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি , আনসার ও ভিডিপি এবং কোস্ট গার্ডের বাদকদল এদিন বাদ্য পরিবেশন করবে।
এদিন সকল শিশু পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ এধরনের বিনোদন কেন্দ্রসমূহ শিশুদের জন্য বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। এছাড়া নৌবন্দর এবং নৌঘাটে নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের জাহাজ সর্বসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। সিনেমা হলসমূহে বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। গণযোগাযোগ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন উন্মুক্ত স'ানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করবে।
দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবসি'ত বাংলাদেশ দূতাবাসেও জাতীয় কর্মসূচির আলোকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
#
মারম্নফ/মাহমুদ/মোশারফ/সেলিম/২০১৭/১৯০০ ঘণ্টা
তথ্যবিবরণী নম্বর : ৮৩৩
কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস'া
-- ভূমিমন্ত্রী
আটঘরিয়া (পাবনা), ১০ চৈত্র (২৪ মার্চ) :
ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ কৃষকের জন্য সরকারি প্রণোদনা বা বরাদ্দকৃত টাকা যারা আত্মসাৎ করবে তাদের বিরম্নদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস'া নেওয়ার জন্য সংশিস্নষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আজ পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আটঘরিয়া উপজেলার প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় খরিপ-১/২০১৭-১৮ মৌসুমে উফশী আউশ ও নেরিকা আউশ চাষি ৪০০ জনের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, বীজ, সার, আগাছা দমন ও সেচ সহায়তার জন্য কারো হাতে নগদ টাকা দেওয়া হবে না, চেক দেওয়া হবে। নগদ টাকা দিতে গেলে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার সুযোগ থাকে। কৃষকের নামে ব্যাংকে ১০ টাকায় একাউন্ট খুলে একাউন্টের বিপরীতে চেক প্রদানের জন্য সংশিস্নষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, কৃষক ভাইয়েরা দেশের মেরম্নদন্ড। কৃষকের মেহনতের টাকা ঠিকমত ব্যাংকে জমা হলো কী না সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য তিনি স'ানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। তিনি স'ানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃত্বদানকারীদের দুর্নীতিমুক্ত থাকার পরামর্শ দেন।
পরে মন্ত্রী ক্ষুদ্র ও প্রানিত্মক ৪০০ কৃষকের প্রত্যেকের মাঝে বিনামূল্যে উফশী আউশ ১ বিঘার জন্য ধানবীজ ৫ কেজি, ইউরিয়া ২০ কেজি, ডিএপি ১০ কেজি, এমওপি ১০ কেজি ও সেচ সহায়তা বাবদ ৪০০ টাকা এবং নেরিকা আউশের জন্য ১০ কেজি ধান বীজ, ২০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি ডিএপি, এমওপি ১০ কেজি এবং সেচ সহায়তা ও আগাছা দমন বাবদ ৮০০ টাকা বিতরণ করেন।
#
রেজুয়ান/মাহমুদ/মোশারফ/সেলিম/২০১৭/১৭৫০ ঘণ্টা
তথ্যবিবরণী নম্বর : ৮৩২
ইসলামি শিড়্গার সাথে আধুনিক শিড়্গার সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে
-- শিড়্গামন্ত্রী
ঢাকা, ১০ চৈত্র (২৪ মার্চ) :
শিড়্গামন্ত্রী নুরম্নল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ইসলামি শিড়্গাকে আধুনিক শিড়্গার সাথে সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইসলামি শিড়্গার উন্নয়ন, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ দেশের আলেম সমাজের শত বছরের দাবি পূরণ করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ৫২টি মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। এর ফলে ইসলামের ব্যাপক চর্চা গড়ে উঠবে।
তিনি আজ ঢাকায় জাতীয় শিড়্গা ব্যবস'াপনা একাডেমি (নায়েম) অডিটোরিয়ামে ‘ফাজিল অনার্স শিড়্গার মান উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উলস্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিড়্গা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা আইন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্নাঙ্গ রূপ দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স'ায়ী ক্যাম্পাস ও নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৪৮৪ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মাদরাসা শিড়্গকদের বেতনভাতা এবং মর্যাদার তারতম্য দূর করা হয়েছে। তাদের মর্যাদা ও বেতন ভাতা সাধারণ শিড়্গকদের সমান করা হয়েছে। মাদরাসায় আধুনিক শিড়্গার সমন্বয় করে আইসিটি, বিজ্ঞান এবং বাংলা-ইংরেজী চালু করা হয়েছে। ফলে মাদরাসা শিড়্গার্থীদের জন্য সব ধরনের চাকুরির সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে। তারা একদিকে যেমন ভাল আলেম হবেন, তেমনি ভাল অফিসারও হতে পারবেন। মাদরাসায় অনার্স শিড়্গার মান উন্নয়নে সবধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি। কোর্সগুলোর সিলেবাস ও কারিকুলাম উন্নয়নে তিনি সংশিস্নষ্টদের সুপারিশমালা তৈরিরও পরামর্শ দেন। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কেউ যাতে শিড়্গার্থীদের বিভ্রানত্ম করতে না পারে, সেজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে আলেম সমাজের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
সভায় দেশের সকল ফাজিল (অনার্স) মাদরাসার অধ্যড়্গ, উপাধ্যড়্গ ও সংশিস্নষ্ট শিড়্গকগণ উপসি'ত ছিলেন।
অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদকে দেখতে হাসপাতালে শিড়্গামন্ত্রী
শিড়্গামন্ত্রী নুরম্নল ইসলাম নাহিদ আজ বিশিষ্ট শিড়্গাবিদ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদকে দেখতে ধানমন্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালে যান। মন্ত্রী তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং দ্রম্নত আরোগ্য কামনা করেন। উলেস্নখ্য, গত ২২ মার্চ অধ্যাপক আবু সায়ীদের একটি সফল অস্ত্রোপচারের পর তিনি ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
#
আফরাজ/মাহমুদ/সেলিম/২০১৭/১৭২০ ঘণ্টা
তথ্যবিবরণী নম্বর : ৮৩১
গণহত্যা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
ঢাকা, ১০ চৈত্র (২৪ মার্চ) :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে নি¤েœাক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
‘‘১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে। অর্থনৈতিক শোষণ ছাড়াও তারা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগ নেয়। পাকিস্তানিদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু প্রথম রুখে দাঁড়ান। তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রাম। বাঙালিদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার এবং নির্যাতন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬-দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম যৌক্তিক পরিণতির দিকে ধাবিত হয়।
আগরতলা মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু বাঙালিরা দমবার পাত্র নন। তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে আনেন। আইয়ুব খানের পতন হয়। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ইয়াহিয়া খান আর জুলফিকার আলী ভুট্টো মিলে ষড়যন্ত্র শুরু করে বাঙালিদের ক্ষমতা হস্তান্তর না করার। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা স্বাধীনতার ডাক দেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ইয়াহিয়া খান আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। পাকিস্তান থেকে সৈন্য নিয়ে আসে পূর্ব বাংলায়। ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট-এর আদেশ দিয়ে গোপনে পাকিস্তানে চলে যায় ইয়াহিয়া খান।
২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর ও বন্দরে হত্যা করা হয় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। সেই রাত থেকে পরবর্তী নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর-রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর
সদস্যরা সারাদেশে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালায়। হত্যা করে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে। এত কম সময় ও স্বল্প পরিসরে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যার নজির বিশ্বে আর নেই। শুধু মানুষ হত্যা নয়, একইসঙ্গে ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করা হয়। লক্ষ লক্ষ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়। বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয় প্রায় এক কোটি মানুষকে।
গ্রেফতারের পূর্ব মুহুর্তে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তৎকালীন ইপিআর ওয়ারলেসসহ টেলিপ্রিন্টার-টেলিগ্রামের মাধ্যমে এ ঘোষণা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
পাকিস্তানি বাহিনী এবং তার দোসরদের সেই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ শুরুর দিন ২৫শে মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ২০শে মার্চ মন্ত্রিপরিষদ ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে গত ১১ই মার্চ মহান জাতীয় সংসদে এ দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
(পরবর্তী পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)
-২-
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা বিশ্বের জঘন্যতম গণহত্যাগুলোর অন্যতম। বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত অসংখ্য প্রতিবেদন, দূতাবাসগুলোর বার্তা এবং পরবর্তীকালে দেশি-বিদেশি লেখক-ইতিহাসবিদের রচনায় গণহত্যার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
১৯৭১ সালের ১৩ই জুন সানডে টাইমস পত্রিকায় অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘জেনোসাইড’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে সময় ঢাকায় মার্কিন কনসাল জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন আর্চার ব্লাড। তিনি যেসব টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে সেখানে বাংলাদেশের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বা ‘নির্বাচিত গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। হোয়াইট হাউসে প্রেরিত বার্তার ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক গ্যারি বাস-এর গ্রন্থ 'ইষড়ড়ফ ঞবষবমৎধস : ঘরীড়হ, করংংরহমবৎ ধহফ ধ ঋড়ৎমড়ঃঃবহ এবহড়পরফব.' সেই গ্রন্থেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংঘটিত ঘটনাকে জেনোসাইড বা গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গিনেস বুক অভ্ রেকর্ডসে বাংলাদেশের ১৯৭১-এর হত্যাযজ্ঞকে বিংশ শতাব্দীর ৫টি গণহত্যার মধ্যে অন্যতম গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইবুনালস) আইন, ১৯৭৩ প্রণয়ন করেছিলেন। সেই আইনের আওতায় অনেকের বিচার সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেয় এবং বিচার কাজ বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদার করে। বেগম জিয়াও স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে গণহত্যার দোসর নিজামী-মুজাহিদদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়।
আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
গণহত্যা দিবসে আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতাকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহিদ এবং ২ লক্ষ নির্যাতিত মা-বোনকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি সকল শহিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
২৫শে মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মাহুতির প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকা-ের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
আমি গণহত্যা দিবস উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশে চিরজীবী হোক।’’
#
ইমরুল কায়েস/মাহমুদ/মোশারফ/আব্বাস/২০১৭/১৭১০ ঘণ্টা
তথ্যবিবরণী নম্বর : ৮৩০
গণহত্যা দিবসে রাষ্ট্রপতির বাণী
ঢাকা, ১০ চৈত্র (২৪ মার্চ) :
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে নি¤েœাক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
‘‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যা বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি বর্বরতম ও মর্মান্তিক ঘটনা। এ দিবসটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। ‘গণহত্যা দিবস’ বাংলাদেশের মুুক্তিসংগ্রামে ত্রিশ লক্ষ বাঙালির আত্মত্যাগের মহান স্বীকৃতির পাশাপাশি তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদের প্রতীক।
নানা ষড়যন্ত্র করেও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে প্রতিহত করতে না পেরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করতেই ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদারেরা এ দেশের গণমানুষের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তাদের জঘন্য এ হত্যাযজ্ঞে হাত মিলিয়েছিল তাদের দোসর কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী।
বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তা বিশ্বের সকল গণমাধ্যমেই গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছিল। হত্যা-নিপীড়নের ভয়াবহতায় এক কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতে। আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের অনেক সেনা মুক্তিযুদ্ধে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। আমরা তাদের পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি ।
একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। নৃশংস এই হত্যাকা-ের ভয়াবহতা কেউ কোনোদিন ভুলতে পারে না। এমন গণহত্যা আর কোথাও যাতে না ঘটে, ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের মাধ্যমে সে দাবিই বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হবে ।
হত্যা-নিপীড়ন করে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশকে থামিয়ে রাখতে পারেনি কেউ। সকল বাধা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মন্ত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যহীন সমৃদ্ধির আধুনিক, সবুজ, টেকসই, শান্তিময় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে দেশ আজ ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই আমরা একাত্তরের গণহত্যায় জীবনদানকারী প্রতিটি প্রাণের প্রতি জানাতে পারি আমাদের চিরন্তন শ্রদ্ধাঞ্জলি।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’’
#
আজাদ/মাহমুদ/মোশারফ/আব্বাস/২০১৭/১৭০০ ঘণ্টা